২৮ মে ২০২৫
আজ বুধবার সকাল থেকেই তীব্র যানজটের মুখোমুখি হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকার তিনটি ব্যস্ততম অঞ্চল—মতিঝিল, শাহবাগ ও পল্টন । আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হয় এ যানজট এবং দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। মূলত এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পৃথক রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ও তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন রয়েছে। তা হন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। মূলত তাদের আয়োজনে পল্টনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ কে ঘিরে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম হয় রাজধানীর এই কেন্দ্রস্থলে । নারায়ণগঞ্জ,গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার কর্মী বাস, মাইক্রোবাস ও পিকআপে করে প্রবেশ করেন রাজধানীতে । এর কারণে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেই সকাল থেকে তীব্র যানজট শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে পুরো ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়ে ।
পল্টন মাঠকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় জিরো পয়েন্ট, প্রেসক্লাব মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল ও আশপাশের এলাকায় । ঢাকার এসব এলাকার সড়কে কার্যত যান চলাচল অচল করে দেয় এই মিছিল, স্লোগান ও দলীয় ব্যানারসহ সমাবেশমুখী নেতাকর্মীদের ঢল ।
একই সময়ে শাহবাগ এলাকায় সৃষ্টি হয় ভিন্ন একটি পরিস্থিতি। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দলটির নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই তাদের এই আকস্মিক জমায়েত মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে শাহবাগ মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রমনা, কাঁটাবন, বাংলামোটর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় চরম যানজট।
শাহবাগে দায়িত্বে থাকা এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জামায়াত কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়, ফলে সড়ক বন্ধ হয়ে যায় এবং যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায় এবং তা আশপাশের এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।”
অন্যদিকে সকাল ১০টার পর থেকেই মতিঝিল এলাকায় একেবারে থেমে যায় যানবাহনের গতি । রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় কর্মজীবী মানুষের জন্য সৃষ্টি হয় একপ্রকার ‘অবরুদ্ধ’ পরিস্থিতির । অনেকেই বিকল্প পথে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন অফিসে পৌঁছাতে না পেরে ।
শান্তিনগর এলাকায় যানজটে আটকে থাকা যাত্রী মো. আব্দুল কালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “উত্তরা থেকে বের হয়েছি সকাল ১১টায় , এখনও পৌঁছাতে পারিনি মতিঝিলে । এই যানজট একেবারেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে প্রচণ্ড গরমে ।”
নাইটিঙ্গেল মোড়ে আটকে থাকা সিএনজি চালক আনোয়ার হোসেন যানজটের বিষয়ে জানান, “আজ হয়তো সিএনজির জমার টাকাই উঠাতে পারবো না। এখন পর্যন্ত ট্রিপ করেছি মাত্র একটা । বের হতে পারছি না কাকরাইল-নাইটিঙ্গেল থেকে ।”
ডিএমপির ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম এই বিষয়ে জানান, “যান চলাচল ধীরগতির হয়ে পড়েছে শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় । আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।”
ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের ডিসি জালাল উদ্দিন চৌধুরী এই যানজটের বিষয়ে বলেন, “আজ রাস্তায় প্রচণ্ড চাপ রয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে । কিছু এলাকায় রাস্তা ফাঁকা রাখার উদ্যোগ নিয়েছি যাতে অন্তত জরুরি যান চলাচল করতে পারে।”
Tasin/DBN