সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।আজ ২ জুলাই রোজ বুধবার দুপুর বেলা বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে এ আদেশ দেন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল । ট্রাইব্যুনালের অন্য দুইজন সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনা গত ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর গাইবান্ধার এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনের সময় বলেন, “আমি ২২৭ জনকে মারার জন্য লাইসেন্স পেয়েছি।” কথোপকথনের এই অডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে ব্যাপক পরিমাণ বিতর্ক সৃষ্টি করে। বক্তব্যটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন মহলে এটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় ।
চিফ প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই বক্তব্য শুধু অপ্রত্যাশিত নয়, বরং এটি এই দেশের বিচারব্যবস্থা, সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে আইনের শাসন এবং সংবিধানপ্রদত্ত মানবাধিকারকেও । বিচার বিভাগের কার্যক্রমকে এই বক্তব্যের মাধ্যমে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য গত ১৯ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে নিয়োগ দেন । আদালতের ইতিহাসে এ ধরনের মামলায় পলাতক আসামির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের নজির না থাকলেও, একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয় ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় খরচে শেখ হাসিনার পক্ষে ।
ট্রাইব্যুনাল বুধবারের শুনানিতে শেখ হাসিনার ওই ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড শুনে। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, “একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেত্রীর মুখ থেকে এ ধরনের বক্তব্য হচ্ছে আদালতের প্রতি এক অবজ্ঞা, যা বিচারপ্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এক বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।”
সব দিক বিবেচনার পর আদালত রায় ঘোষণা করেন যে, স্পষ্টভাবে আদালত অবমাননার শামিল এবং এটি বিচারব্যবস্থার প্রতি হুমকি দেখা গিয়েছে শেখ হাসিনার এই বক্তব্য । তাই তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় । ট্রাইব্যুনাল আরও উল্লেখ করে, ভবিষ্যতে কোনোদিন এ ধরনের মন্তব্য বা আচরণ দেশের সংবিধান, আইন এবং বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা ও সম্মানহানির চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হবে।
শেখ হাসিনা পলাতক হওয়ায় এই দণ্ড কার্যকর করার জন্য পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Tasin/DBN