প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার মতো শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা হয়নি। আমি
ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব কেন? আমি তো সব হারিয়েই দেশের মানুষ নিয়ে
বেঁচে আছি৷ বার বার আমাকেই টার্গেট করেছে হত্যা করার জন্য৷ এসব ভয় না পেয়ে,
দেশের জন্য কাজ করে গেছি৷ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ও অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্বব্যাপী
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে৷ বর্বরতা কোনো আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না।
ধ্বংসস্তুপ বানিয়ে গাজার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এরা। এদের বিচার একদিন হবে৷
এজন্য সুষ্ঠু বিচার দরকার। আন্তর্জাতিক তদন্তটা আমি চাই।
‘বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা
বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্বরতা কোনো আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না।
আন্তর্জাতিক তদন্ত করে বের করা হবে কারা এসবে জড়িত। সেই তদন্তে জাতিসংঘসহ
যেকোনো দেশ চাইলে অংশ নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে জাতির পিতাকে হত্যার পর, পথ চলেছে
আওয়ামী লীগ৷ বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বিচারহীনতার পরিবেশ
থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনার কাজটাও আওয়ামী লীগই করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে অনেক
বড়-বড় দেশ আমাদেরকে সাপোর্ট করেনি। সেভেন ফ্লিটও পাঠানো হয়েছিল (মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর)৷ স্বাধীনতার পর ব্যঙ্গ এদেশকে নিয়ে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো।
তাদের ব্যঙ্গকে মিথ্যা করে, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছি। এ অর্জনটা কিন্তু হয়েছে
বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজ যারা ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী তারা তো জানে না যে, আগের সময়টা
কেমন ছিল। আজ পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডুকতা দিয়ে কিন্তু সকলের
অজান্তেই একটা গোষ্ঠী বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ছিল।
পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে তারা। কোটা আন্দোলনের
নামে তাদের সবশেষ আঘাতটা দেখা গেল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে জঙ্গি ঢুকে
হত্যাযজ্ঞ ও মানুষের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত হেনেছে। শিক্ষার্থীদের
দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হলেও, এ আন্দোলন কার স্বার্থে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রশ্ন তার।
কোটা আন্দোলনে ঝাঁকে-ঝাঁকে মানুষ হাজির হওয়া শুরু করল। তখন আমি ভাবনায়
পড়লাম। এত শিক্ষার্থীর তাহলে কী হবে। তারা তো কোনো কথাই শুনছে না। তারা যা চাইলো,
তার চেয়েও বেশি পেল আদালতের মাধ্যমে। তারপরও তাদের আন্দোলন ও দাবি কোনোটাই
থামে না। তাদের সেই তাণ্ডব দেখা গেল গোটা দেশজুড়ে। জনগণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
করা জিনিসগুলোর ওপরই আঘাত করা হলো কেন? কতগুলো প্রাণ ঝরল উল্লেখ করেন
তিনি। এছাড়া অস্ত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত মানুষ-ওরা কারা? মেয়ে হয়ে মেয়েকে
অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে পাকিস্তানি হায়েনাদের মত৷ এ কেমন বর্বরতা এমন প্রশ্ন
রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হলেও এই আন্দোলন
কার স্বার্থে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে? কতগুলো প্রাণ ঝরে গেল! পুলিশের ওপর আক্রমণ,
মসজিদের মাইকে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে মানুষ ডেকে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। এ পর্যন্ত
অনেক মৃত্যুর খবর আপনারা পাচ্ছেন, জানছেন। এবারও ২০০ মানুষ মারা গেল।
কতগুলো প্রাণ, শিশুদের প্রাণ গেল। এগুলোর পাশাপাশি মিথ্যাচারও ছিল।
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আমাকে ফোন করেছিল। তাকে উদ্ধার করার
জন্য৷ তাণ্ডব চালানো হলো বিভিন্ন জায়গায়-এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন
বর্বরতা আবার কোন ধরনের আন্দোলন? এটাকে আবার সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের
কিছু জ্ঞানীগুণীরা। তারা কিসের সমর্থন দিচ্ছেন? দাবি যা ছিল, তা তো পূরণ হয়েছে।
আমি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণেই অভিভাবকদের সতর্ক করেছিলাম যে, এখানে সন্তানদের
জীবনের ঝুঁকি আছে। জিনিস গেলে ফেরৎ পাওয়া যায় কিন্তু জীবন গেলে তা আর
ফেরৎ আসে না।
তিনি আবারও বলেন, এত শ্রম দিয়ে দেশটাকে একটা স্তরে নিয়ে এসেছিলাম, সেই দেশ
নিয়ে এখন বিদেশে কত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন করা কী অপরাধ?
দেশ নিয়ে আজ জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে৷ আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে এসব ঘটনার।
জাতিসংঘসহ অন্য কোনো দেশ চাইলে, তারাও তাদের টিম পাঠাতে পারে। বের করতে
হবে এর পেছনে কারা? যারা অপরাধী তাদের ধরতে হবে৷ কেননা, আমরা বানাব আর
কেউ শুধু ভেঙে তামা তামা করবে, তা হয় না। কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে ভয়াল থাবা
দেখাল তারা।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জায়গা বাংলাদেশে হতে পারে না। এদের মূলশক্তি
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। এরা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালাবে৷
সবাইকে একসঙ্গে হয়ে তাদেরকে পরাস্ত করতে হবে৷ শোকের মাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল
পর্যন্ত সবাই শোক পালনের পাশাপাশি মানুষের পাশে থাকবেন৷ সামনে ঝড়-বন্যা যাই
আসুক, মানুষকে সাহায্য করে যেতে হবে।