আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন সময়ে ঝটিকা মিছিল করছে। তারা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় মিছিল করেছে । তবে, এবার আওয়ামী লীগের এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে বাড়ানো হবে গ্রেপ্তার তৎপরতাও।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) লিশ সদরদপ্তরে ‘হল অভ প্রাইড’ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে। ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপরাধ ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেফতার বাড়াতে হবে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও ট্রুপসদের পেশাদারত্ব, টিম স্পিরিট, শৃঙ্খলা ও মনোবল বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অধীনস্থদের মধ্যে যাদের পেশাদারত্ব নেই, শৃঙ্খলা নেই, কমান্ড মানতে চায় না, যারা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে ঘন ঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার এবং মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে আরও সক্রিয় করতে হবে। জেলার সব বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে।
থানা থেকে লুট হওয়া, হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জেলার কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের আপামর জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। সবার প্রত্যাশা বাংলাদেশ পুলিশ সামনের জাতীয় নির্বাচনে এমন এক মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশসহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়–ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী মাঠে আপনারা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নন; আপনারা জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় সিআইএসসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা অংশ নেন। এসময় পুলিশ সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

