আজ বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব এক বক্তব্যে বলেছেন, শেখ হাসিনা যে মাফুজাকে ধর্ষণের ঘটনায় সাতক্ষীরায় এসেছিলেন, তিনি সেই ঘটনার বিচার করেননি। উল্টো তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে আমাকে দেওয়া হয়েছিল ৭০ বছরের কারাদণ্ড । অথচ ওই দিন আমি সাতক্ষীরায় ছিলাম না, ঢাকায় ছিলাম।
আজ ২৩ অক্টোবর রোজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের হোটেল টাইগার প্লাসে আয়োজিত ৪৪ জন বিএনপি নেতা খালাস পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমাদের যে সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে আমাদের মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল। মৃত্যু বরণ না করে ফিরে এসেছি, এখন মানবসেবাই আমার লক্ষ্য। যে ধর্মেরই হোক না কেন, স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টির সেবাতেই এখন আমার কাজ।
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা থেকে খালাস পাওয়ার পরও তিনি কোনো প্রতিশোধমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো মানসিকতা আমার নেই। আমি কখনোই প্রতিশোধ নিতে চাই না। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। অন্যরা যদি কিছু করতে চায়, করুক, তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ, সদস্যসচিব আবু জাহিদ ডাবলু, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান হাদী, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুস সাত্তার, জেলা যুবদলের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক আইনুল ইসলাম নান্টা, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক অ্যাড. কামরুজ্জামান ভুট্টো প্রমুখ।
এর আগে, বুধবার (২২ অক্টোবর) বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪৪ জন আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদি গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিত স্ত্রীকে দেখতে যান। ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা, গুলিবর্ষণ, বোমা বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা হয়।
বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতজনকে যাবজ্জীবন এবং অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। তবে হাইকোর্ট বুধবার তাদের সবাইকে খালাস দেন।
এ মামলায় আসামিদের পক্ষে আমিনুল ইসলাম আইনজীবী ছিলেন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মজিবুর রহমান রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন।
প্রসঙ্গত একই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায়ও খালাস পান আসামিরা । ওই মামলায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ১০ বছরের সাজা বাতিল করেন বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর বুধবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া উপজেলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেন।