জাতীয় নাগরিক পার্টিকে শাপলা প্রতীক না দিলে ইলেকশন কমিশন (ইসি) বাংলাদেশ থেকে পালানোর জায়গা পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তিনি বলেন, আমরা যে প্রতীক চাইছি, সেই প্রতীক তারা (ইলেকশন কমিশন) আমাদের দেবে না। কিন্তু তারা নাকি আমাদের ওপর একটি প্রতীক চাপিয়ে দেবে। এই ধরনের নজিরবিহীন এবং জঘন্য কথা যেই কমিশন বলতে পারে, আমরা মনে করি, এই কমিশনের পক্ষে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়।
রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত অবস্থান ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তুষার এই বিষয়ে বলেন, আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যদি আপনারা বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তাহলে এই ধরনের অন্যায় আচরণ জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে করা বন্ধ করুন। যে আচরণ আপনারা করছেন, তা থেকে মনে হচ্ছে, আগামীতে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার পথে সবচেয়ে বড় বাধা এই নির্বাচন কমিশন। তারা চায় না দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচনে আসুক। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এই জাতীয় নাগরিক পার্টিকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছে। এই জন্য নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অদৃশ্য শক্তির পরামর্শ অনুযায়ী, তাদের দ্বারা আশ্বস্ত হয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এই বিচার আপনাদের কাছে তুলে দিলাম।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির(এনসিপির) পক্ষ থেকে সবসময় আমরা শিক্ষকদের যেকোনো ন্যায্য দাবির পক্ষে দারিয়েছিলাম এবং এখনো আছি। শিক্ষকরা যখন শহীদ মিনারে অনশনে এসেছিলেন, তাদের ওপর যেভাবে পুলিশ হামলা চালিয়েছে, তখনও আমরা তাদের পাশে ছিলাম এবং আজও আছি। এখানে এসে আপনাদের দাবি আদায় করতে হচ্ছে—এর চেয়ে দুঃখজনক আর কোনো ব্যাপার আমাদের সামনে নেই।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যে দাবি, তা ন্যায্য; এটিতে এই সরকারের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ, এই সরকার আমাদের সবার সমর্থনে গঠিত হয়েছে, এবং এই সরকারে আমরা যাদেরকে বসিয়েছি, তাদের আপনার দাবির প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা দেখতে পেয়েছি, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তারা আমাদের আপামর শিক্ষক সমাজের প্রতি যথেষ্ট যত্ন এবং যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না। তাদের উচিত ছিল, শিক্ষকরা আন্দোলনে আসার আগে বাংলাদেশে শিক্ষক সমাজের কী ধরনের সমস্যা আছে, তা নিয়ে শিক্ষক সমাজের নেতেদের ডেকে বলা যে, আপনাদের জন্য আমরা কী করতে পারি। কিন্তু আজ আপনাদের এখানে আসতে হচ্ছে, অনশনে বসতে হচ্ছে… এবং আপনারা যেটা ন্যায্য দাবি করেছেন, সেই দাবি নিয়ে দিনরাত এখানে বসে থেকে সরকারের কাছে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের দাবি পূরণ করে দিন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশে থাকতে চান, যদি সম্মানের সঙ্গে থাকতে চান, তাহলে নির্বাচনের আগে, ক্ষমতা ছাড়ার আগে, তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের শিক্ষকদের যত ন্যায্য দাবি আছে—যেগুলো আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—তা মেনে তারপরই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। যদি তা না করেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজো করেন, তাহলে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ আপনাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে এবং বলবে, ‘আমরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের জন্য কী করেছেন? আমাদের শিক্ষকদের জন্য কী করেছেন? আমাদের প্রাইমারি শিক্ষকদের জন্য কী করেছেন? আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য কী করেছেন?
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, একটি বিচারও আপনাদের কাছে দিতে চাই। আপনারা দেখেছেন, আপনারা যতো ন্যায্য দাবি তুলছেন, তা মানা হচ্ছে না। আমাদের একটি অত্যন্ত ন্যায্য দাবি আছে। এই নির্বাচন কমিশন এবং এই সরকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর অধীনে গঠিত এই কমিশন, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে ধর্ণা দিয়ে বেড়ায়—তারা আমাদের এই অত্যন্ত ন্যায্য দাবি মানছে না। আমরা বলেছিলাম, আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে হবে। কেন আমরা এই প্রতীক চেয়েছি? এই প্রতীক বাংলাদেশের মানুষের অন্তরের মধ্যে রয়েছে। শাপলা ফুল বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতীক। প্রতিনিয়ত নির্বাচন কমিশন বলছে, এই প্রতীক আমাদের দেওয়া যাবে না। কেন দেওয়া যাবে? এই প্রশ্নে তারা আমাদের কোনো যৌক্তিক বা আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।