ঐতিহাসিক জাতীয় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু এতে স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন জুলাই সনদে অংশ না নেওয়ার কারণ জানালেন । তিনি এই বিষয়ে বলেছেন, ‘জুলাই সনদের ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তিহীনতা এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশার কারণেই এনসিপি তাতে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করা থেকে বিরত রয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করেই এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা না দিয়েই সরকার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। জুলাই সনদের কোনো আইন ভিত্তি না দেওয়া, বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ না করা এবং পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে না আনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছি।’
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে। শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হলেও, তাদের মঞ্চ থেকে দূরে বসিয়ে তাদেরকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি শহীদ পরিবার , বরং তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে । জুলাই সনদকে পাওয়ার এলিটের সেটেলমেন্ট বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে।’
এনসিপি কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি এই বিষয়ে আখতার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে এবং সনদের আইনি ভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’র উল্লেখ নেই। অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে কোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনি ভিত্তি থাকতে হবে, কিন্তু সনদে জনগণের সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতার মৌলিক সত্যের উল্লেখ নেই।’
এদিকে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) শহীদ পরিবার ও আহতরা কিছু দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গেলে ঐক্যবদ্ধ কমিশন পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দিলেও, শুরুতেই বিষয়টি আমলে নিলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না। আহত যোদ্ধাদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান আখতার হোসেন।
এনসিপির এই নেতা সতর্ক করে জানান, যে সনদের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত ‘বেসিক স্ট্রাকচার’-এর আওতাভুক্ত। ফলে ’৭২ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, যা জুলাই সনদকে জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণায় পরিণত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এনসিপি সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে গণভোটের পূর্বে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির আহ্বান জানিয়েছে, যাতে এর আইন ভিত্তি, বৈধতা ও জুলাই অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।