সামাজিকমাধ্যম খুললেই অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদকে দেখা যায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। কখনও কক্সবাজার আবার কখনও বান্দরবানে। কক্সবাজারে কাটানো কয়েকটি দিন যেন তাঁর মধ্যে নতুন এক প্রাণসঞ্চার করেছে। সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রতীরে ছিলেন তিনি।
সেখানে হয়েছে ৩২ পর্বের একটি ভ্লগিং শোর কাজ– যার ৮টি পর্বে উপস্থাপনায় আছেন তিনি। নাম
তিনি বলেন, ‘এমন কক্সবাজার আগে দেখেছেন কি?।’ এটাই তাঁর প্রথম ট্রাভেল ভ্লগিং অভিজ্ঞতা। ফোনে কথা বলতে বলতে হাসিমুখে জানালেন, ‘বাইরে শুটিং মানেই আমার কাছে পিকনিক! এবার তো নন-ফিকশন ভ্লগিং– আরও মজা। নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি।’
ট্রাভেল ভ্লগিংয়ের প্রতি তাঁর টান নতুন নয়। বছর দুয়েক আগে ফেসবুকে স্ক্রল করতে গিয়ে তিনি নাদিরের একটি ভ্লগে চোখ আটকে ফেলেন। ‘নাদির অন দ্য গো’ থেকে শুরু হয় তাঁর অনুপ্রেরণা। মৌসুমীর ভাষায়, ‘তাঁর কনটেন্টে জায়গা নতুন লাগে আর তথ্য থাকে হাতেগোনা ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতার মতো। কোথাও যাওয়ার আগে তাঁর ভ্লগ দেখে গেলে গাইডলাইন মিলে যায়।’
ভিন্নধর্মী লোকেশন বাছাইয়ের ভাবনা নিয়েও মুখ খুললেন মৌসুমী। ভবিষ্যতে ট্রেকিং, অপরিচিত প্রাকৃতিক স্থান আর কম দেখা অঞ্চল নিয়ে কাজের পরিকল্পনা করছেন তিনি। ‘শুধু জনপ্রিয় স্পট নয়, অদেখা জায়গাতেও সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে’ বললেন তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
এর পাশাপাশি তাঁকে এখন টেনে নিচ্ছে পডকাস্টের জগৎ। বিদেশি কিছু শো দেখে তাঁর মধ্যে ধারণা জন্মেছে, ‘আমাদের দেশে ইন্টারভিউ মানেই অল্প পরিসর। অথচ পডকাস্টে মানুষ নিজের কথাও বলে, অভ্যাসও বলে, মানসিক যাত্রাও উঠে আসে। এমন কিছু করতে চাই, যেটা ফরম্যাটে আলাদা এবং কনটেন্টে সমৃদ্ধ।’ পাশের কলকাতাসহ অন্য অঞ্চলের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজছেন তিনি।
২০১০ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হয়ে আলোচনায় আসেন মৌসুমী। এরপর নাটক, টেলিছবি, সিনেমা আর উপস্থাপনায় ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন। এক পর্যায়ে ক্যামেরার পেছনের প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়। তখন থেকেই মনে হয়, কোনো একসময় পরিচালনাতেও নামবেন। এখন তাঁর পরিকল্পনা ফিকশন নয়, আগে নন-ফিকশন দিয়ে হাত পাকানো।
সিনেমার দিক থেকেও তাঁর যাত্রা উল্লেখযোগ্য। ‘জালালের গল্প’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’, ‘১৯৭১: সেই সব দিন’, ‘নয়া মানুষ’ এমন বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সর্বশেষ সোহেল রানা বয়াতির ‘নয়া মানুষ’ সিনেমাটিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। সামনে শুরু হবে নতুন একটি সিনেমার শুটিং। তবে বিস্তারিত বলার অনুমতি নেই তাঁর। অভিনয়ের ফাঁকেই নতুন এক পরিচয় তৈরি করেছেন তিনি। ঢাকার নিকেতনে চারজন সহকর্মী বন্ধুর সঙ্গে মিলেই একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছেন।
টেলিভিশনেও এর কাজ চলমান। সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘বিশ্বাস বনাম সরকার’ নামে একটি ধারাবাহিকের কাজ। এটি পরিচালনা করেছেন সকাল আহমেদ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘যাপিত জীবন’, যা নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই। সিনেমাটি তৈরি হয়েছে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে। চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন অনিমেষ আইচ ও ইমতিয়াজ হৃদয়। সরকারি অনুদানের সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
সিনেমাটি প্রসঙ্গে মৌসুমী হামিদ জানান, এ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘আফজাল হোসেনের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে আমার অনেক পুরোনো। আমার মা- বাবাও তাঁকে ভীষণ পছন্দ করেন। এত বছরে নানা কাজ করলেও তাঁর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এ সিনেমাটি সেই অপ্রাপ্তিটা মিটিয়ে দিয়েছে। আফজাল ভাই শুধু দক্ষ অভিনেতাই নন, তাঁর ব্যক্তিত্ব আর ব্যবহার থেকেও শেখার মতো অনেক কিছু আছে। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারাটা সৌভাগ্যের।’
সিনেমায় অভিনয়ের কারণ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “‘যাপিত জীবন’ মূলত ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। গল্পের ভেতরে যে মানবিক স্রোত, সেটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছে। সেলিনা হোসেনের লেখার শক্তিটা ধরে রেখে সিনেমা তৈরি হচ্ছে এটা ভেবে কাজটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ছবিটা নিয়ে আমার ভরসা অনেক, বিশেষ করে আফজাল ভাইয়ের সঙ্গে পর্দায় কেমন লাগবে– সেটা দেখার অপেক্ষা করছি।’
টানা ১৫ বছরের পথচলায় কখনও অভিনয়, কখনও উপস্থাপনা আবার কখনও নতুন স্বপ্নে জেগে ওঠা এক মুখ মৌসুমী হামিদ। কক্সবাজারের সমুদ্রতীর থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক যাত্রা যেন তাঁকে আবারও ফিরিয়ে দিচ্ছে নতুন এক পরিচয়ের পথে। অভিনেত্রী থেকে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ, আর হয়তো খুব দ্রুতই নির্মাতা বা পডকাস্ট হোস্ট। এমনটিই আশা করছেন তাঁর ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীরা।