একজন ইউটিউবার, নাম জেরান ক্যাম্পানেলা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে flat earth বা সমতল পৃথিবীর তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। তার মতে, পৃথিবী গোল না বরং একটি চ্যাপ্টা ডিস্কের মতো, যার প্রান্তে বরফের দেয়াল ঘেরা। যেটিকে অনেক ফ্ল্যাট earth বিশ্বাসীর বলে থাকে “আইস ওয়াল”। জেরান ক্যাম্পানেলা এমনও বিশ্বাস করতেন যে অ্যান্টার্কটিকায় কখনোই ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যায় না, কারণ তার মতে সেটি বাস্তবতা হলে flat earth মডেল ভেঙে পড়বে। তাই এই তত্ত্ব যাচাই করতে তিনি প্রায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করে নিজেই রওনা দিলেন অ্যান্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে, অংশ নিলেন “The Final Experiment” নামে একটি প্রকল্পে।
পৃথিবী যদি সত্যিই গোল হয় এবং তার অক্ষ কিছুটা ঢালু অবস্থায় সূর্যের চারপাশে ঘোরে, তাহলে দক্ষিণ গোলার্ধে অর্থাৎ অ্যান্টার্কটিকায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সূর্য একটানা আকাশে থাকতে পারে। এটিকে বলে মিডনাইট সান বা মধ্যরাতের সূর্য। অর্থাৎ সূর্য অস্ত যায় না, বরং ঘুরে ঘুরে নিচু কোণে আবার ওপরে উঠে আসে। এটি শুধু একটি অপটিক্যাল ফেনোমেনন নয়, বরং পৃথিবীর গোলাকৃতি এবং তার ঘূর্ণন ও কক্ষপথের কারণে সৃষ্ট একটি অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা।
তো জেরান ক্যাম্পানেলা যখন বাস্তবে এই অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেন, তখন তিনি নিজেই তার চোখের সামনে দেখলেন যে সূর্য একটানা আকাশে আছে। রাত হয়েছে, কিন্তু অন্ধকার হয়নি। সূর্য আবারও নিচু হয়ে উঠে আসছে। আর Flat earth মডেল অনুসারে এটি অসম্ভব!
এর কারণ হচ্ছে, flat earth মডেল অনুসারে পৃথিবীকে একটি চ্যাপ্টা ডিস্কের মতো ভাবা হয়, যার মাঝখানে উত্তর মেরু আর প্রান্তে হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা। সেই মতে সূর্য একটি ছোট বাতির মতো, যা এই ডিস্কের ওপর ঘোরে। একে আপনি টেবিলের ওপর টর্চ ঘোরানোর মতো ভাবতে পারেন অর্থাৎ আলো সবখানে পড়ে না, শুধু মাঝ বরাবর একটি অংশে পড়ে। ফলে ডিস্কের একেবারে প্রান্তে থাকা অ্যান্টার্কটিকায় সূর্য একটানা ২৪ ঘণ্টা দৃশ্যমান হওয়া উচিত না।
কিন্তু বাস্তবে, অ্যান্টার্কটিকায় গ্রীষ্মকালে সূর্য কখনো ডোবে না। রাতেও আলো থাকে, সূর্য নিচু কোণে ঘুরে আবার উঠেও যায়। এটা তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোল এবং তার অক্ষ কিছুটা হেলানো। পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে ঘোরার সময় এই ঢালু অবস্থার জন্য দক্ষিণ মেরুতে সূর্য একটানা দৃশ্যমান থাকে। এই দৃশ্য ফ্ল্যাট আর্থ মডেলের পক্ষে একেবারেই ব্যাখ্যাতীত।
সুতরাং এই অভিজ্ঞতার পর জেরান তার আগের বিশ্বাস থেকে সরে আসেন এবং প্রকাশ্যে বলেন, তিনি ভুল ছিলেন। এমনকি তিনি flat earth মডেলের সবচেয়ে পরিচিত মানচিত্র, যেটি Azimuthal Equidistant Projection নামে পরিচিত, সেটিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তার বক্তব্য ছিল, এই মানচিত্র আর বাস্তব পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মেলে না।
আবার ফ্ল্যাট আর্থারদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে অ্যান্টার্কটিকা সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ, তাদেরও ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এই টিম বৈধভাবে অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ করেছে। তারা মনে করতেন অ্যান্টার্কটিকা আসলে একটি গোপন এলাকা, যেখানে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। কারণ তাদের বিশ্বাস, governments বা space agencies সেখানে প্রবেশে বাধা দেয়, কারণ সেখানে গিয়ে কেউ সত্যটা—যেমন আইস ওয়াল বা flat earth প্রমাণ দেখে ফেলতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে অ্যান্টার্কটিকা নিষিদ্ধ নয়। ১৯৫৯ সালের Antarctic Treaty অনুযায়ী, এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত। শুধু কিছু নিয়ম মানতে হয়, যেন পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। তাছাড়া অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণে কোনো বাধা নেই।
Tasin/Digital Khobor