বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ বা Proportional Representation (পি.আর.) নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক আলোচনায় । এই পদ্ধতি আসলে কী, কেন এটি আনা হচ্ছে তা নিয়ে রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ও কৌতূহল দেখা দিয়েছে ।
পি.আর. পদ্ধতি আসলে কী?
পি.আর. বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি ভোটব্যবস্থা, যেখানে জনগণ সরাসরি প্রার্থীর নাম দেখে ভোট না দিয়ে রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়। এরপর সেই রাজনৈতিক দলটি যে পরিমাণ ভোট পায়, সে অনুযায়ী একটি অনুপাত ধরে সংসদে আসন বরাদ্দ পায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি দল যদি জাতীয়ভাবে মোট বৈধ ভোটের ৩০% ভোট পায়, তাহলে সংসদের সেই দলের জন্য মোট ৩০% আসন নির্ধারিত হবে। ওই ৩০% আসনে কারা সংসদ সদস্য হবেন, তা দল নিজেই নির্ধারণ করবে ;পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী।
প্রচলিত পদ্ধতির ভোট ব্যাবস্থার সঙ্গে পি আর পদ্ধতির ভোট ব্যাবস্থার পার্থক্য কথায়?
বর্তমানে বাংলাদেশে ‘প্রথমে আসা, প্রথমে জয়ী’ (First Past the Post – FPTP) পদ্ধতি চালু আছে। দেশের প্রতিটি আসনে প্রার্থীরা এই ব্যবস্থায় সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই নির্বাচিত হন। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এলাকাভিত্তিক জনপ্রতিনিধিত্ব ।
অন্যদিকে, পি.আর. পদ্ধতিতে জনগণ সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দেয় না, জনগন সরাসরি দলকে ভোট দেয়, ফলে অনেক সময় স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতার জয় নিশ্চিত থাকে না।
পি.আর. পদ্ধতির বিরোধিতা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “এটি যদি বাস্তবায়িত হয় স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ হবে। এলাকাভিত্তিক গণতান্ত্রিক চর্চা ধ্বংস হবে এবং দলীয় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে।”
অন্যদিকে, পি.আর. পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়ে অনেকে বলছেন, এই ব্যবস্থা দলীয় প্রতিনিধিত্বকে আরও সঠিকভাবে তুলে ধরে এবং সংসদে ছোট দলগুলোরও অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ায়।
বিশ্বের আর কোথায় এই পি.আর. পদ্ধতি চালু আছে?
পি.আর. পদ্ধতি বর্তমানে অনেক দেশে চালু রয়েছে—বিশেষত ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ, যেমন: জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ইত্যাদি। তবে তারা সাধারণত মিশ্র (Mixed Member Proportional) পদ্ধতিও অনুসরণ করে, যাতে কিছু আসনে সরাসরি ভোট আর কিছু আসনে পি.আর. পদ্ধতি থাকে।
Tasin/DBN