১৩ জুন ২০২৫:
দেশের রাজনৈতিক সংকটের মূল সুরাহা ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর করার মাধ্যমেই সম্ভব বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
তারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রীয় কাঠামো ঠিক করতে মৌলিক সংস্কার, বিচার প্রক্রিয়ার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এবং ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন করা ছাড়া নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করা হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে গণ্য করা হবে ।
গতকাল শুক্রবার রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয় এসব কথা । এই বিবৃতিতে দলটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপট ও সরকারের মনোভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন এনসিপি।
এনসিপি বিবৃতিতে জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে আলোচনাকে তারা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে তারা গ্রহণযোগ্য মনে করছে লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠককে । বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার এই বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনী বিষয়ক আলোচনায় আস্থায় আনতে পেরেছে।”
তবে এনসিপি পরিষ্কার অর্থে জানিয়ে দেয়, নির্বাচনকে যদি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলকে সন্তুষ্ট করেই সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়, তবে সেটি নামান্তর হবে দেশের বৃহত্তর গণআকাঙ্ক্ষাকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে ।
এনসিপির মতে, এই আলোচনায় নির্বাচন নিয়ে তারিখ, সময় ও প্রক্রিয়াকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে ‘বিচার’ ও ‘সংস্কার’অনেক কম গুরুত্ব পাচ্ছে যা হচ্ছে দেশের জনগণের মূল দাবি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় নাগরিকদের প্রধান দাবি হলো স্বৈরতন্ত্রের বিচার, প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্কার। কিন্তু আলোচনার ফোকাস বারবার নির্বাচনী তারিখ ও দলীয় সুবিধার দিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”
এনসিপি এটাকে অত্যন্ত হতাশাজনক ও গণআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে বলে উল্লেখ করেন ।
সংসদ নির্বাচন আয়োজন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বিবৃতিতে এনসিপি জোর দিয়ে বলে, “জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর এবং বিচারের রোডম্যাপ না থাকলে । বরং তা সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানকে কেবল ক্ষমতা হস্তান্তরের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলবে।” দলটি মনে করে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে যে গণআন্দোলন হয়েছিল, সেই চেতনাকে বাস্তবায়নে রূপ না দিলে নির্বাচনের কোনো অর্থ থাকবে না।
বিবৃতির শেষাংশে আরও বলা হয়, এখনই সময় সরকারকে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আসন্ন জুলাই মাসকে জনগণের কাছে ‘মর্যাদাবাহী’ করে তুলতে হলে। এনসিপি বলেছে, “আমরা সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছি যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করুন, ‘জুলাই সনদ’ রচনা করুন এবং সেটিকে কার্যকর করে তুলুন। তা না হলে জনগণ এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাবে না।”
Tasin/DBN