২৭ মে ২০২৫:
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন । তিনি দাবি করেছেন, ফেসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ছিল “পাতানো আদালতের প্রহসন”, যেখানে সকল প্রকার মিথ্যা সাক্ষ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অন্যান্য বিচারিক হত্যা চালানো হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয় “জুডিশিয়াল কিলিং”
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এই সম্মেলনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যেখানে দলটির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সকল দিকনির্দেশনাবলি তুলে ধরা হয় অতীতের এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে ।
ডা. শফিকুর রহমান সেখানে আরও বলেন,
“আদালতের নামে প্রহসন চালানো হয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন আমলে । যেভাবে সাজানো অভিযোগ ও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে , তা হয়ে থাকবে ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে ।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব ও বিচার বিভাগীয় চাপের বিষয়টি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার আত্মজীবনীমূলক বইতে স্বীকার করেছেন, যা গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এসব অভিযোগের পক্ষে ।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার সেই ঘটনাকে উল্লেখ করে জামায়াত আমির সংবাদ সংবেদনে বলেন,
“অবশেষে তাকে মুক্তিদান দেওয়া হয়েছে দীর্ঘ দিনের অন্যায় ও অবিচারের অবসান ঘটিয়ে । এটি একটি সত্য ও ন্যায়বিচারের ক্ষুদ্র বিজয়।”
তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, একটি ‘ভয়াবহ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ’ এই সাজা দেওয়ার সময় তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে কোনো সুযোগ বা স্বাধীনতা ছিল না প্রতিবাদ করার ।
ডা. শফিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে । তিনি সম্মেলনে বলেন,
“কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি ৭১’র হত্যাযজ্ঞের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর । বরং সুখরঞ্জন বালি নামক একজন নিরপেক্ষ হিন্দু সাক্ষীর অপহরণ এবং তার গুম হয়ে যাওয়া প্রমাণ করে যে, নিয়ন্ত্রিত ও অসত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত ছিল সেই বিচার প্রক্রিয়া ।”
তিনি এ প্রক্রিয়াকে ‘জেনোসাইড অব দ্য জাস্টিস’ আখ্যা দেন — অর্থাৎ, এটি ন্যায়বিচারকে নিধন করার মত একটি প্রক্রিয়া।
‘সেফ হোম’, ‘সেফ হাউস’ ও নির্যাতনের অভিযোগ
জামায়াত আমিরের ভাষ্য মতে, ‘সেফ হোম’ তৈরি করা হয়েছিল বিচার চলাকালে তাদের নেতাদের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর জন্য । পাশাপাশি, ভুয়া সাক্ষী সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের জন্য গোপন ‘সেফ হাউস’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
একটি দলকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এ ধরনের কথিত প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বলেন,
কেউ “আমাদের আচরণ, পারফরম্যান্স বা কর্মের দ্বারা কষ্ট পেয়ে থাকে তাহলে আমরা নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইছি। আমরাও মানুষ, মানুষের ভুল হতেই পারে। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভুলের জন্য ।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা শহীদ পরিবার, আহত ও পঙ্গু সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পরও ।আমরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাইনি আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও।”
‘প্রতিশোধের নয়, সমতার রাজনীতি’ গড়ার অঙ্গীকার
সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
“যদি কখনও দেশের জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতায় আমাদের কাঁধে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আসে, তাহলে আমরা কখনো প্রতিশোধ নয়, প্রতিষ্ঠা করবো সমতা ও ইনসাফের রাজনীতি ।নির্বিশেষে সবাইকে দলমত সমান চোখে দেখবো আমরা।”
Tasin/DBN