জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিকর্মী ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী ডিজিটাল খবরের সাক্ষাতকারে বলেন,
আমি এখনো বাবা হয়নি, পিতৃত্বের স্বাদ কেমন আমি এখনো বুঝিনি, সন্তানের প্রতি বাবার দরদ কেমন আমার এ অনুভূতি এখনো জাগ্রত হয়নি। সন্তানের আগমনের উচ্ছাস কিম্বা প্রস্থানের কষ্ট কখনো আমাকে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু আজ মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপর প্রশিক্ষণ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আমার নিজের ভিতর পিতৃত্বের অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ প্রতিজন কোমলমতি শিশুকেই মনে হয়েছে আমার আপন সন্তান। অগ্নিদগ্ধ শিশুরা যখন দিকবিদিকশুন্য হয়ে বাঁচার আকুতি নিয়ে বাবা মা বলে চিৎকার করছিলো, তখন আমার মতো দূরে থাকা প্রতিজন মানুষের হৃদয়ে নিশ্চয়ই একটু হলেও নাড়া দিয়েছে।
আমার নিজের কোন সন্তান আজ হারায়নি, তবুও মনে হয়েছে নিজের সন্তানদের কে হারিয়ে ফেল্লাম আমাদের লোভ, লালসা আর দূর্নীতির কারনে। প্রশিক্ষণরত পাইলট আমার রক্তের কেউ না, বয়সে আমার ভাগনে ভাগনির মতো, সদ্য বিবাহিত একজন স্বামী চিরতরে হারিয়ে গেলো তার নববধূকে শোক সাগরে ভাসিয়ে। অথচ দূর্নীতির মহাসাগর আর অব্যবস্থাপনার মাস্টার মাইন্ডরা হয়তো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে জলকেলি খেলছে কোন সাগর কিম্বা মহাসাগরের জলরাশিতে। মাইলস্টোনের যে শিক্ষিকা নিজের শরীরের আশি শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরও নিজ সন্তানদেরকে বাঁচানোর জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করলেন, ইতিহাসের পাতায় হয়তো তাঁর নাম ঠাঁই পাবে না, কিন্তু তাঁর ছায়ায় দেখতে পেলাম আমার নিজের মায়ের মুখখানি, সন্তান হিসেবে যখনই কোন বিপদে পড়ি জীবন বাজি রেখে এগিয়ে আসেন যিনি তিনিই তো মা। আল্লাহ নিশ্চয়ই এই মাকে বেহেশতে তাঁর সাথে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া শিশুদের সাথে একসাথে বসবাসের সুযোগ দিবেন। বাবারা সহজে কাঁদেন না, তাদের হৃদয় নাকি পাথর দিয়ে গড়া, একথা আজ মিথ্যা বলে মনে হলো যখন দেখলাম বাবারা তাদের নিখোঁজ আর আহত সন্তানদের জন্য পাগলপ্রায় হয়ে ছুটে চলছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। আমার মতো অনেকে বাবা হননি, অনেকে হয়তো বিয়ে করেননি, তবুও বাবার দায়িত্ব নিয়ে সন্তানদের রক্ত দেওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছেন হাসপাতালের কম্পাউন্ডে। গৃহিণী থেকে শিক্ষার্থী সবাই এসেছেন পরম মমতায় সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
সন্তানদের বিপদে আমরা ঘরে থাকতে পারিনা, এটাই আমাদের সাহস, প্রেরণা আর মানবিকতা। এটাই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
Mehedi/ DBN