এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আজ। এ ফলাফল ঘিরেই একসময় উত্তেজনা, প্রত্যাশা আর একটু ভয় মেশানো আনন্দ ছিল তারকাদের মনে। হাজারো শিক্ষার্থীর মতো দেশের এই অভিনয়শিল্পীরাও একসময় অপেক্ষা করেছিলেন এমন দিনের জন্য। কেউ পেয়েছিলেন দারুণ ফল, কেউ হয়তো ততটা নয়। কিন্তু পরের গল্পটা সবারই অনুপ্রেরণার।
বেশির ভাগ তারকাই জানান, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিনটি ছিল তাঁদের জন্য উৎকণ্ঠার। পরীক্ষায় কত পাবেন, আর কে কী বলবে—এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এই তারকারা। একসময় উৎকণ্ঠা কাটিয়ে সফলতার সঙ্গে কৃতকার্য হন সাফা কবির , পূজা চেরী, তাসনিয়া ফারিণ ও তটিনীরা। কে কত পেয়েছিলেন?
সাফা পেয়েছিলেন ৪.৫০
প্রায় এক যুগ আগের কথা। সাফা ২০১২ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। চিন্তায় ফলাফল প্রকাশের আগের রাতে তিনি ঘুমাতে পারেননি । তার পরিক্ষার ফলাফল কী হবে- এ চিন্তাই রাতে ঘুমাতে দেয়নি তাঁকে । পরে দুপুরের দিকে ভয়ে ভয়ে ফলাফল জানার জন্য যান । সাফা এই বিষয়ে জানান, পড়াশোনায় খুব বেশি মনোযোগ ছিল না তাঁর । ভালো লাগত না পড়াশোনা করতে। শুধু মায়ের জন্যই পড়তে যাওয়া হয় সাফার। তাঁর মতে, মায়ের জন্যই ছিল পড়াশোনায় মনোযোগ ।
সাফা বলেছিলেন, ‘রেজাল্ট জানতে ভয়ে ভয়ে কলেজে গিয়েছিলাম। এদিকে রাত থেকে কী যে চিন্তা। ঘুমাতে পারিনি। সবাই জানতে চাইছেন, কত পেয়েছি। পরে ভয়ে ভয়ে রেজাল্ট দেখে আমি খুব খুশি। আম্মুর কথা ভেবে আরও ভালো লাগল। কারণ, আম্মু এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন। আমার রেজাল্ট হলো কাঁটায় কাঁটায়, যা প্রত্যাশা করেছি, তা-ই।’ তিনি পড়াশোনা করতেন বিএফ শাহীন কলেজে। এইচএসসিতে ৪.৫০ পেয়েছিলেন সাফা।
কত পেয়েছিলেন পূজা চেরী ?
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী পূজা চেরী। এইচএসসি পরীক্ষার সময়টা এই নায়িকার জন্য ছিল চাপের। এ সময় পড়ে যায় তার শুটিং। ব্যস্ততার মধ্যেই দিতে হয় এইচএসসি পরীক্ষা । যে কারণে ফলাফল প্রকাশের দিন এই ঢালিউড নায়িকা শঙ্কায় ছিলেন । পরীক্ষার আগে নিয়মিত শুটিং করায় ভেবেছিলেন পাস করবেন টেনেটুনে ।
এ নিয়ে পূজা বলেছিলেন, ‘পরীক্ষার আগে “গলুই” সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম অনেক । সেই সময় আমাদের লম্বা সময় জামালপুরে থাকতে হয় শুটিং করার জন্য । আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারলে পরীক্ষার রেজাল্ট আরও ভালো হতে পারত। এ জন্য রেজাল্ট দেখে মনটা খারাপ হয়েছে। তবে এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম।’ পূজা খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, ৪.০৮ পেয়ে পাস করেন। এতেই তিনি খুশি ছিলেন। কারণ, পড়াশোনা শেষে চাকরির চেয়ে সিনেমায় ক্যারিয়ার গড়া নিয়েই তাঁর সব ভাবনা।
কত পেয়েছিলেন তাসনিয়া ফারিণ?
পড়াশোনা নিয়ে সব সময়ই চাপে থাকতেন তাসনিয়া ফারিণ। তিনি জানান, ভালোর জন্য মা তাঁকে চাপে রাখতেন। কখনো বলতেন, খারাপ করলে পড়াশোনা করে আর লাভ কী। বিকল্প ব্যবস্থা নেবেন। তখনই আরও মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করতেন। হলি ক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারিণ। তিনি এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
ফারিণ এই নিয়ে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ‘আমি তো মায়ের জন্য পড়েছি। মায়ের কড়াকড়ি ছিল এ বিষয়ে। একদম নিয়মের মধ্যে থাকতে হতো। এমনও হয়েছে, অনেক সময় পড়াশোনার বাইরে কিছুই চিন্তা করতাম না। যেন পড়াটাই ছিল আমার জীবন। আসলে প্রেশার না দিলে পড়তাম না, এটা সত্য। এ জন্য সব সময় ভালো ফল করেছি। এইচএসসির ফল দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।’
তটিনী পেয়েছিলেন গোল্ডেন এ প্লাস
পড়াশোনায় খুব মনোযোগ ছিল তানজিম সাইয়ারা তটিনীর। সারাক্ষণ নাকি বই নিয়ে বসে থাকতেন। বন্ধুরা বলতেন, তাঁর নামের সঙ্গে মেধাবীই মানানসই। তাই পরীক্ষায় কত পাবেন, সেটা বন্ধুরা আগেই বলে দিয়েছিলেন। তারপরও ফলাফল নিয়ে ভয় ও চিন্তায় ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী তটিনী। তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন বরিশাল মহিলা কলেজ থেকে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলাম। সেই পড়াশোনার দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো ভয় লাগে। হয়তো এ জন্য বাড়তি চাপে থাকতাম। ভয়ের মধ্যে থাকতে হতো। ভয়ে ভয়ে রেজাল্ট দেখতে গিয়েছিলাম। পরে তো দেখি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। তখন তো খুবই খুশি হয়েছি।’
পড়াশোনা করে চিকিৎসক হওয়ার কথা ছিল তটিনীর। তাঁর পছন্দ ছিল মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে। অবশেষে তিনি হয়ে গেলেন অভিনেত্রী। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার অভিনয় নিয়ে কখনোই কোনো ইচ্ছা ছিল না। হঠাৎই অভিনয়ে আসা। এখন তো অভিনয় করেই যাচ্ছি। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার সময়ের সেই দিনগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসে। রেজাল্টের আগে ভয় পেতাম আর পরে তো উৎসবের মতো মনে হতো।’