কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সরকারের অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁসের হুমকি দেওয়া বা ব্ল্যাকমেইলের মতো কর্মকাণ্ডে জড়ানো অনৈতিক, বেআইনি ও গণতন্ত্রবিরোধী বলে মনে করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এছারাও বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ আইনের শাসনের পরিপন্থি ও দণ্ডনীয়। যারা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে সুবিধা নেওয়ার চিন্তা করছেন, সরকারের উচিত তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশ মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মিরপুরে গতকাল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন মানুষ ।শামসুজ্জামান দুদু তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং বলেন, এখন এ দেশ কার্যত রয়েছে নানান বিপদের মধ্যে । কাজকর্মে যারা বের হন, তারা উদ্বিগ্ন এই নিরাপত্তা নিয়ে । কিসের জন্য এই সরকার ? সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাস্তাঘাটে বের হলে মানুষ অনিরাপদ বোধ করছে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ও অনুরোধ করছি, এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
শামসুজ্জামান দুদু জানান,
“নির্বাচিত সরকারই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিতে পারে। অনির্বাচিত সরকার নয়। গণতন্ত্র যদি এখন প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে স্বৈরতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের সামনের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার যে অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, তা কোনো না কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে। তাই আজ যারা সরকারে আছেন, তাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো বিশেষ দলের প্রভাবে যেন নির্বাচন পরিচালনা, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) বা নির্বাচন-সম্পর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রভাবিত না হয়। যদি তা হয়, তবে দেশের গণতন্ত্র আশাহত হবে এবং মানুষ নিরাশ হবে।”
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন,
“অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো এক রাজনৈতিক দল ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে নাকি তারা কী করতে চাইছে তা আমি জানি না। তারা সরকারের অভ্যন্তরের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, তা প্রয়োজনে তারা ফাঁস করবে। এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং সরকারের জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে না। সরকারের অভ্যন্তরে চর নিয়োগ করা, লোক নিয়োগ করা বা ব্ল্যাকমেইল করার মতো কাজ কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ নয়; এটি শোভনীয় নয়। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি দণ্ডনীয় এবং বেআইনি। তাই আমি বলব-যারা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে সুবিধা নেওয়ার চিন্তা করছেন, সরকারের উচিত তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা।”
শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই বিষয়ে তিনি বলেন,
“৭৩-৭৫ এর কথা স্মরণ করলে দেখবেন গণতন্ত্র স্বাধীনতার কথা বলে শেখ মুজিবুর রহমান তিন বছরে বাকশাল গঠন করেছিলেন, প্রায় ৪০ হাজার বিরোধীদলে নেতার কর্মীকে হত্যা করেছে রক্ষী বাহিনী গঠন করে । গত ১৫-১৬ বছর মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য। এই পরিবার আগা-গোড়া খুনি, গণহত্যাকারী ও লুটপাটকারী। তাদের বিচার অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে। এই খুনিদের কোনোভাবে পুনর্বাসন করা যাবে না।”
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“যতদিন পর্যন্ত এই খুনিরা (আওয়ামী লীগ) থাকবে, ততদিন পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী একটা দেশ বিপন্ন করবে বাংলাদেশকে । গত ৫৪ বছর ধরে এই দেশ শোষণ করেছে। গত তিনটি নির্বাচনে তারা একবারের জন্য বলে নাই এটা নির্বাচনের মত নির্বাচন হয় নাই। সেজন্য এইসব বিপদ আপদ ষড়যন্ত্র রুখতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আমাদের যা অর্জন গণতন্ত্রের যে সম্ভাবনা সেটা ধ্বংস হয়ে যাবে। গণতন্ত্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না।”