আজ ১৫ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন,
“দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আজ আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। দেশে কোনো সরকার না থাকায় সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সংবিধানের অনেক বিধানাবলি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের বৈধতার উৎস এবং ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এ বর্ণিত বিধানের জনগণের অভিপ্রায়।“
তিনি আরও বলেন,
“সংবিধানের ত্রুটি ও রাষ্ট্রের কাঠামোগত অব্যবস্থার সুযোগে কর্তৃত্ববাদী শাসন, ভিন্নমত দমন, দুর্নীতি ও দলীয়করণের ফলে গোটা দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে রাষ্ট্রের সব বিভাগের সংস্কার অপরিহার্য হয়ে ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে দু/একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।”
তিনি বলেন,
“সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।”
নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের আরও বলেন,
“ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন।”
১৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরে তিনি বলেন,
“আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আজ ১৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।”
দাবিসমূহ হলো-
১। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা
২। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা
৩। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা,
৪। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।
৫। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা
উক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালন করা হবে ইনশাআল্লাহ।
১… ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
২…১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল
৩…২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সকল জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম ও এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব আব্দুর রব ও জনাব মোবারক হোমাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আবদুর রহমান মূসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।
Tasin/Digital Khobor