বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ইসলামী ও দেশপ্রেমিক সমমনা সকল দলের সমন্বয়ে একটি ঐক্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ৫ আগস্ট পরিবর্তিত সময়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। নতুন বাংলাদেশে পূর্বের মত আর সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন-খারাবী থাকবে না। দেশ হবে সাম্যের, ঐক্যের, ন্যায়ের ও ইনসাফের। নতুন বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সমান অধিকার ভোগ করবে।
আজ ১৩ সেপ্টেম্বর রোজ শনিবার দিনব্যাপী খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে গণসংযোগকালে পৃথক পৃথক ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন,
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এদেশের আলেম-উলামাদের উপর অকথ্য নির্যাতন, দমন-পীড়ন করেছিল। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ জামায়াত, হেফাজত, চরমোনাই এর হাজার হাজার আলেম-উলামাকে বিনা অপরাধে বছরের পর বছর জেলে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে। জনগণ মনে করে সরকার চিকিৎসার নামে পরিকল্পিতভাবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে হত্যা করেছে। আলেম-উলামাদের উপর এই নির্যাতনের কারণ হলো একটাই তা হলো তাঁবেদারি সরকার ব্যবস্থা ও ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলা। এখন সময় এসেছে আলেম-উলামাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ থেকে জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটানো। তাই আগামী নির্বাচনে আলেম-উলামা দেশপ্রেমিক জনতা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিয়ে এদেশ থেকে তাঁবেদারি ও আধিপত্যবাদী শক্তির চির অবসান ঘটাতে হবে।
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন,
“এমপি থাকাকালীন সময়ে তার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০০১ সালে আপনারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন। আমি আপনাদের সাথে নিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত ডুমুরিয়া গড়েছিলাম। ডুমুরিয়া মিকশিমিল রাস্তা কার্পেটিং, ডুমুরিয়া থুকড়া গফ্ফার কার্পেটিং, ডুমুরিয়া-সাজিয়াড়া সড়ক কার্পেটিংসহ মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, শশ্মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, ডুমুরিয়া মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, নতুন বিদ্যুতায়নের উন্নয়ন করেছিলাম। আগামী সংসদ নির্বাচনে পুনরায় যদি আপনারা আমাকে দায়িত্ব দেন তাহলে অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের বাকি কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।”
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন,
“গত ১৯ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাবেশে আমাদের দলের প্রধান ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে দূর্নীতির ব্যাপারে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। ২০০১ সালে আমাদের ১৬জন এমপিসহ দুইজন মন্ত্রী ছিলো জোট সরকারে। তৎকালীন এক এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চিরুনি দিয়ে চেষ্টা করেছিল জামায়াত নেতাদের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের একজন এমপি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি টাকারও দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। তাই আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের ভালোবাসায় জামায়াতে ইসলামী যদি সরকার গঠন করে তাহলে এ দেশ থেকে দূর্নীতি অনিয়ম দূর করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।”
পরে সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ায় ডুমুরিয়ার খলশী ক্যাডেট স্ক্রীম মাদরাসা, লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা পরিদর্শন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাওলানা সাইফুল্লাহ, নায়েবে মুহতামিম মুফতি আজিজুর রহমান, হাফেজ মাওলানা আশিকুর রহমান, মুফতি ইমরান হোসাইন, মুফতি আবু জর, হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
সকাল ৮টায় খলশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এবং বিকেল ৫টায় ডুমুরিয়া মজিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা মাঠে সদর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্দুল গণি খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, খুলনা জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির। মশিউর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, উপজেলা নায়েবে আমীর গাজী সাইফুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা ছাত্রশিবির নেতা মো. বোরহান উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ডুমুরিয়া উপজেলার সহ-সভাপতি মুফতি আব্দুস সালাম, হিন্দু কমিটির সেক্রেটারি দেবপ্রসাদ মন্ডল, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল আলম, সদর ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ গোলাম হায়দার, অধ্যক্ষ শেখ জালাল উদ্দীন, ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের ছাত্রশিবির সভাপতি আবু তাহের ও পশ্চিম সভাপতি শামিদুল হাসান লিমন, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু সুজিদ কুমার বর্ধন, ডা. নিত্য রঞ্জন রায়, মাওলানা মশিউর রহমান প্রমুখ।