টেকনাফ – সেন্টমার্টিন নৌপথ ছারাও নাফ নদীর বাংলাদেশ সীমান্তেও নিষেধ করা হল নৌযান চলাচল | নির্দেশে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসক |
এর আগে, ৪ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর আরাকান আর্মি নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য
নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশি জেলেসহ সকল ধরনের নৌযান
চালকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাফ নদীতে নৌযান নিয়ে না নামার জন্য সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্তের পূর্ব
পাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছিল। নাফ নদী সীমান্ত বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণে নাফ নদীতে
কোনো নৌকা বা ট্রলার না নামানোর জন্য মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি, সীমান্তে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং
যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নাফ নদীর জলপথ ও সীমান্ত এলাকায় বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।
তবে কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। কেবল নাফ নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ জানিয়েছেন, বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য
নৌযান চলাচল নিষেধ করা হয় । এর আগে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। তবে বুধবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিন ও
টেকনাফ থেকে কোনো ট্রলার ছেড়ে যায়নি। এই নৌপথে ২৭টি সাভিস ট্রলার ও ৪৭টি স্পিডবোট রয়েছে।
একইসঙ্গে টেকনাফ সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা উপ-অধিনায়ক মেজর
সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ। তিনি জানান, সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্ত সুরক্ষা
ছাড়াও চোরাচালান, মাদকদ্রব্য, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ দমনে দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নাফ নদীতে টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জলে ও স্থলে
টহল পরিচালনা করছে। পাশাপাশি, সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, গত শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার বা জাহাজ টেকনাফ স্থলবন্দরে আসেনি এবং মালামাল খালাস করা
কার্গো ট্রলার ও জাহাজ মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারছে না।
তিনি জানান, গত শুক্রবার মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে মাছভর্তি একটি কার্গো ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিতে নোঙর করেছে। তবে শনিবার থেকে বুধবার দুপুর
পর্যন্ত আর কোনো ধরনের ট্রলার বা জাহাজ বন্দরে আসেনি।
টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা ও সাবেক মংডুর সিকদারপাড়া এলাকার আলীর জোহার জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের
মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপ দখলে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পতাকা উত্তোলন করেছে। এই কারণে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী মংডু টাউনে
কারফিউ জারি করেছে। স্থানীয় লোকজন বাড়িঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছে না বলে তার নিকটাত্মীয় ও স্বজনরা মোবাইল ফোনে তাকে জানিয়েছেন।