সিরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে যে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান রাজধানী দামেস্কে হামলা চালিয়েছে এবং দেশের আরও কয়েকটি স্থানে বেশ কয়েক ডজন হামলা করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ১০০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়েছে, তার মধ্যে এমন একটি গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে, যা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা আসাদ সরকারের পতনের পর “চরমপন্থীদের হাতে” অস্ত্র চলে যাওয়া রোধ করার জন্য কাজ করছে।
সোমবার, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে জানানো হয় যে, আগামী দিনে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ চলছে। রাশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মনে হয়, পরিষদ সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও ঐক্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কমবেশি একমত ছিল। পাশাপাশি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়েও সবাই একমত ছিল।”
এসওএইচআর আরও জানিয়েছে, গত দুই দিনে ইসরায়েল শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে দামেস্কে এমন একটি সাইটও ছিল, যা ইরানি বিজ্ঞানীরা রকেট তৈরির জন্য ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে। এই হামলার সময় জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল, যাতে তারা নিশ্চিত করে যে রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ নিরাপদ রয়েছে।
রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা (OPCW) অনুসারে, রাসায়নিক অস্ত্র হলো এমন রাসায়নিক পদার্থ যা বিষাক্ততার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যু বা ক্ষতি ঘটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী, বৈধ সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপস্থিতি থাকুক বা না থাকুক, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কারণ, এই ধরনের অস্ত্রের প্রভাব নির্বিচার এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
সিরিয়ার কোথায় বা কতগুলো রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ রেখেছিলেন এবং যে পরিমাণ অস্ত্রের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা অসম্পূর্ণ ছিল। ২০১৩ সালে, রাজধানী দামেস্কের শহরতলিতে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার এক মাস পর সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা (OPCW)-এর চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ঐ হামলায় নার্ভ এজেন্ট সারিন ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এতে ১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
হামলার পর যন্ত্রণায় কাতর ভুক্তভোগীদের ভয়াবহ ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। পশ্চিমা শক্তিগুলো দাবি করে, এ হামলা আসাদ সরকারের পক্ষ থেকেই চালানো হয়েছিল। তবে আসাদ তার বিরোধীদের ওপর দায় চাপান। ওপিসিডব্লিউ এবং জাতিসংঘ সিরিয়ার সরকার ঘোষিত ১,৩০০ টন রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করলেও, দেশটিতে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার ঘটনা বন্ধ হয়নি। বিবিসি ২০১৮ সালে একটি বিশ্লেষণে নিশ্চিত করে যে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সিরিয়ায় একাধিক রাসায়নিক হামলা হয়েছে।
সোমবার, ওপিসিডব্লিউ জানায় যে তারা সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে “দেশে রাসায়নিক অস্ত্র সম্পর্কিত সকল উপকরণ ও সুবিধার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপের লক্ষ্যে।”
সোমবার, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী একটি ছবি প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়, তাদের সৈন্যরা ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান হাইটস থেকে সিরিয়ার নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোনে প্রবেশ করছে, যেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
এই ঘটনা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘোষণার পরপরই ঘটে। নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে, সামরিক বাহিনী অস্থায়ীভাবে তথাকথিত “এলাকা বিচ্ছিন্নকরণ” (এরিয়া অফ সেপারেশন)-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৪ সালে সিরিয়ার সঙ্গে করা বিচ্ছিন্নতা চুক্তি দেশটির বিদ্রোহী দখলের কারণে “পতিত” হয়েছে।