বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন,
“দক্ষিণ অঞ্চলের সাদা সোনা খ্যাত গলদা চিংড়ি চাষ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তাই চিংড়ি চাষ আধুনিকীকরণ ও সময়োপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ, চিংড়ি চাষীদের জন্য সহজ ও নির্বিঘ্নে চিংড়ি রেণু সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। চিংড়ি রেণু পরিবহনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। সহজলভ্যভাবে চাষীদের চিংড়ি সময়মত ও সুষ্ঠুভাবে অবতরণ এবং রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণে সঠিক ও মাননিয়ন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা মুনাফাখোর যেন চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনার বয়রা মোস্তর মোড়ে মৎস্য অবতরণ ও বিপণন কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন,
“এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিল আশীর্বাদ না হয়ে এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ভারি বর্ষণে বিল ডাকাতিয়াসহ এ অঞ্চলের প্রায় ১৪টি বিল তলিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করতে না পেরে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করে। এই এলাকার মানুষ হিসাবে এটা আমার কাছে অনেক কষ্টের, অনেক বেদনার। বিগত সময়ে আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিলের পানি নিষ্কাশনে কালিতলা, লতার বিল, শোলমারিসহ বিভিন্ন স্লুইসগেটের আগে পরে ড্রেজিং করিয়ে পানি প্রবাহ ঠিক রেখেছিলাম। কিন্তু গত ১৭ বছরে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন খালে বিলে পাটা দিয়ে, সরকারি খালের জমি লিজ নিয়ে ঘেরের নামে দখল করে, নদী ও খাল সঠিক সময়ে ড্রেজিং না করায়, পানি প্রবাহ ঠিকমত না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে বিল এখন তলিয়ে যায়। ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। এ অবস্থায় আমি আপনাদের কথা মাথায় রেখে পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি সম্পদ উপদেষ্টা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনা ডিসি, ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার ইউএনও’র সাথে দেখা করে ও ফোনে কথা বলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সতের বছরের সমস্যা তো আর একদিনে বা এক মাসে যাবেনা। তাছাড়া এখন তো রাজনৈতিক সরকারও নেই। ফলে যতটুকু পারছি চেষ্টা করছি। তবে আপনাদের কাছে আমি এ কথা দিতে পারি আগামী নির্বাচনে আপনারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন আর আমার দল যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তাহলে বিল ডাকাতিয়াসহ এই অঞ্চলের সকল বিলের জলাবদ্ধতা দূর করাই হবে আমার প্রধানতম কাজ।”
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে এমপি থাকাকালীন সময়ের কথা উল্লেখ করে সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন,
“আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন বলেই তো আমি এ এলাকার বিভিন্ন রাস্তা কার্পেটিং করা, ইটের সলিং করা, মসজিদ মন্দিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করতে পেরেছিলাম। তাছাড়া তখন ছিলাম আমি নবীন। কিন্তু এখন আমি প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে পরিণত হয়েছি। ফলে আপনারা যদি আমাকে আবারও নির্বাচিত করেন তাহলে আমি আপনাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
তিনি আরও বলেন,
“রাষ্ট্রে বা সমাজে যদি ইসলাম চালু থাকে তাহলে অমুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকে। খোলাফায়ে রাশেদার যুগের ইতিহাস পড়লে বোঝা যাবে, মুসলিম শাসকদের আমলে অমুসলিমরা কতটা নিরাপদ ও শান্তিতে বসবাস করেছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় যুগে যুগে ক্ষমতালোভী শাসকরা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে লোকজনদের ভুল বুঝিয়ে ইসলামের কল্যাণ থেকে জাতি গোষ্ঠীকে মিস গাইডেড করেছে। ফলে মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে চাইলেও তারা যোজন যোজন দূরে অবস্থান করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সময় এসেছে ইসলাম প্রিয় আলেম-উলামাদের নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি দেশের শাসন ক্ষমতা যদি ইসলাম প্রিয় আলেম-উলামাদের হাতে যায় তাহলে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী এদেশের লোক নিরাপদে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে। আর আমাদের হিন্দুসহ সকল অমুসলিম ভাইয়েরা সবচেয়ে নিরাপত্তায় থাকবে।”
তিনি বলেন,
“আমাদের আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডা. শফিকুর রহমান ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন, যেখানে জনগণের উপর কোনো শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন চলবে না, শাসক হবে সেবক, মায়েরা বোনেরা নিরাপদে তাদের যাবতীয় কর্মকান্ড করবে, বেকার যুবকরা লেখাপড়া শেষ করে চাকুরি নিয়ে বের হবে অন্যথায় তাদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। তাই আসুন অনেক দলের ক্ষমতা আপনারা দেখেছেন এবারের নির্বাচনে ইসলাম প্রিয় লোকজনকে নির্বাচিত করে তাদের শাসন ক্ষমতা কেমন হয় সেটা দেখুন।”
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন,
“জনগণ পরিবর্তন চায়। গত ১৬-১৭ বছরে যে দুঃশাসন, নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও অপকর্ম জনগণ দেখেছে সেই নির্যাতন নিষ্পেষণ অপকর্মের দিকে মানুষ আর ফিরে যেতে চায় না। তারা এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়, যা পরিচালিত হবে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠিক তেমন একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়তে চায়, যেখানে থাকবে না কোনো অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতি ও দুঃশাসন। থাকবে পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। রাষ্ট্রের মালিকানা থাকবে জনগণের, আর শাসক হবে সেবক। যেখানে শাসক কখনো শোষক হবে না, লুটপাট করবে না, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন করবে না। তাই একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন এবং আগামী নির্বাচনে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গঠনে সহযোগিতা করুন।”
হরিণটানা থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্দুল গফুরের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির, খানজাহান আলী থানা আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সরকারি বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি এডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম, গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ তুহিন হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দেবাশিস মন্ডল, শেখ হেদায়েত হোসেন লিখন, নিত্যানন্দ রায়, যুতুষ্টি মন্ডল প্রমুখ।