সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক ইস্যু, নির্বাচন ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে সেই সাক্ষাৎকারে প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণ করেননি তারেক রহমান , বরং বার্তা দিয়েছেন রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারা তৈরি করার জন্য ।
আজ ৬ অক্টোবর রোজ সোমবার সকালে বিবিসি বাংলা উক্ত সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে । আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটির বাংলা বিভাগের সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোলকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান আরও জানিয়েছেন তিনি দ্রুতই দেশে ফিরে আসবেন।
তারেক রহমান সেখানে আরও বলেন,
“আমরা চাই, দেশের রাজনীতি হোক প্রতিযোগিতামূলক কিন্তু তা যেন হয় নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার সীমার মধ্যে।”
তার বক্তব্যে তিনি আরও যোগ করেন,
“জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে রাজনীতি থেকে ঘৃণা নয়, সহযোগিতা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।”
তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না– এমনটি প্রশ্ন করা হলে এর উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,
“সে সিদ্ধান্ত একাই আমার নয়, এটি নির্ভর করবে দল ও দেশের জনগণের ওপর। যদিও বর্তমানে শারীরিকভাবে যুক্তরাজ্যে আছি, মন-মানসিকতায় তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরেই বাংলাদেশে রয়ে গেছি এবং দ্রুতই দেশে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।”
নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলার সময় তারেক রহমান বলেন,
“নির্বাচনের সঙ্গে আমার ওতপ্রোত সম্পর্ক; জনগণের প্রত্যাশিত অংশগ্রহণ থাকলে আমাকে সেখানে থাকতে হবে।”
জুলাই আন্দোলনে ‘মাস্টারমাইন্ড’ তকমা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,
‘আমি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। জুলাই-অগাস্টের সফল আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বহু বছর আগে থেকে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন,
“এই আন্দোলনে শুধু বিএনপি নয়, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, গৃহিণী, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরাও অংশ নিয়েছেন। দল-মত নির্বিশেষে সবার অবদানেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন তারেক রহমানের এ বক্তব্য বিএনপির জন্য নতুন দিকনির্দেশনা হতে পারে বলে । এই বিষয়ে তারা বলছেন,
“নেতিবাচক ভাষা পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে।”
একজন বিশ্লেষক বলেন,
“তারেক রহমানের এই টোন আসলে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি। এটি দেখায় যে বিএনপি এখন সংঘাত নয়, সংলাপ চায়।”
তারেক রহমানের এমন বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন,
“গত ১৬ বছর আমরা যে প্রতিহিংসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখেছি, সেই পুরোনো ধারার রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি এখন চলবে না, এটা বিএনপি বুঝতে পেরেছে। যার কারণে অনেকগুলো বিষয়ে তারা অন্যদের থেকে এগিয়ে ছিল। যেমন বিএনপি সবার আগে সংস্কারের কথা বলেছে।”
তিনি এই বিষয়ে আরও বলেন,
“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজ এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলেছেন যে, আজ রাজনৈতিক ভেদাভেদ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা যে সংস্কৃতি সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি, চুরি এবং নানা অপকর্মের কারণে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে জেলে যেতে হয়, নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়। এগুলো তাদের কর্মের ফল। কিন্তু তারেক রহমান বলেছেন, জনগণই সবচেয়ে বড় বিচারক, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।”
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান,
“গত এক বছর আমরা জুলাই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ নিয়ে অনেক কথা শুনে আসছি। সেই ইস্যুতে তারেক রহমান বলেছেন, ‘মাস্টারমাইন্ড’ তো কোনো ব্যক্তি হতে পারেন না। জুলাই আন্দোলনে ব্যক্তি ছিল না আসলে। ৫ আগস্টের আগে কোনো ব্যক্তির কারণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ আন্দোলনে গিয়েছে? আওয়ামী লীগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ২০২৪ সালে আন্দোলন করেছে। সুতরাং তারেক রহমান বলেছেন, মানুষই মাস্টারমাইন্ড, নাগরিকরাই মাস্টারমাইন্ড। দুটো কথাই গুরুত্বপূর্ণ, জনগণ বিচারক আর মানুষই মাস্টারমাইন্ড।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন,
“বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির পরিবর্তনের জন্য বিএনপির যে আগ্রহ, সেটার প্রতিফলন তারেক রহমানের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। এটা রাজনীতির নতুন মাত্রা বলে আমি মনে করি।”

