বাংলাদেশের এবার তীব্র রূপ নিচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে জ্বালানির সংকট । দেশের প্রায় ১৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১৫টিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে সম্পূর্ণরূপে অচল রয়েছে ৫টি কেন্দ্র । এর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সক্ষমতার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর ফলস্বরূপ দেশীয় উৎপাদন ঘাটতির কারণে দেশ অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এখন আমদানি করা বিদ্যুতের ওপর ।
সবচেয়ে বেশি অভাব দেখা দিয়েছে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে: উদাহরণস্বরূপ, ঘোড়াশাল ইউনিট 5 (২১০ মেগাওয়াট), ইউনিট 7 (৩৬৫ মেগাওয়াট), ঘোড়াশাল (১০৮ মেগাওয়াট), টঙ্গী (৮০ মেগাওয়াট), ফেঞ্চুগঞ্জ (৯৭ মেগাওয়াট), সিদ্ধিরগঞ্জ (১২০ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট জেরা (৭১৮ মেগাওয়াট), চট্টগ্রাম (৪২০ মেগাওয়াট), কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড (১১০ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট (৩৩৫ মেগাওয়াট ও ৫৮৩ মেগাওয়াট),আশুগঞ্জ (৪৫০ মেগাওয়াট), ঘোড়াশাল রিপাওয়ারড ইউনিট 4 (৪১০ মেগাওয়াট), বাঘাবাড়ী (৭১ মেগাওয়াট) এবং সিরাজগঞ্জ ইউনিট ২-৩ (২২৫ মেগাওয়াট)– এসব কেন্দ্র বর্তমানে গ্যাসের অভাবে পড়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে গ্যাস ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট (৪,৫০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি) ।
এছাড়া, তেলভিত্তিক কেন্দ্রেও নেমে এসেছে বিপর্যয় । ফার্নেস অয়েলভিত্তিক প্রায় ১০টি কেন্দ্র সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মধুমতী ১০০ মেগাওয়াট, চৌমুহনী ১১৩ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট, সাইদপুর ১৫০ ও ২০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট, পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ১০৫ মেগাওয়াট, গাগনগর ১০২ মেগাওয়াট, কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড ১০০ মেগাওয়াট এবং আরও অনেক কেন্দ্রই তেল সংকটে পড়ে বিদ্যুৎ কম উৎপাদন।
বাংলাদেশের দৈনিক গড় বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে এই চাহিদার প্রায় ১৬ % অংশ বিদ্যুৎই আমদানি করা বিদ্যুতের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ভারতের ও নেপালের কাছ থেকে দৈনিক মোট ২,৬৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে–এর উৎস হিসেবে রয়েছে ভেড়ামারার ১,০০০ মেগাওয়াট, আদানি পাওয়ার থেকে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট, ত্রিপুরার ১৬০ মেগাওয়াট এবং নেপাল থেকে ১৪ মেগাওয়াট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আমদানিনির্ভরতা শুধু খরচ বাড়াচ্ছে না বরং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরাপত্তার দিক থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ স্থবির রয়েই গেছে ।

