বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার চক্রটি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে যুক্ত ছিল। এর মধ্যে গত বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করে তারা। এ নিয়ে তখন অনেক তথ্য-উপাত্ত সামনে আসে।
সংক্ষুব্ধরা পিএসসিতে স্মারকলিপিও দেন। তবে দায়িত্বশীল কেউ প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করেননি। এবার চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে বেরিয়ে আসে ফাঁসের তথ্য।
পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যানের চাকরিচ্যুত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তাদের মধ্যে পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামকে বুধবার সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের মামলায় আবেদসহ ছয়জন মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে গ্রেপ্তার সবাইকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) আজাদ রহমান বলেন, আসামিদের জবানবন্দিতে বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। তবে সেগুলো থেকে এখনই সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে জবানবন্দি না দেওয়া আসামিদের মধ্যে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে সিআইডি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই কৌশলে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করা হয়। তখন পরীক্ষার্থীরা প্রমাণসহ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। আশিকুজ্জামান নয়ন নামে এক পরীক্ষার্থী তখন জানান, ২০২১ সালের অক্টোবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় (পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে) জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পরীক্ষার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
প্রায় দেড় বছর পর গত বছরের ১৮ মার্চ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর আগের রাতে আবিদ শাহরিয়ার আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই পরীক্ষার পুরো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষায় সরবরাহ করা প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল।
সিআইডি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন থেকে প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে।
এ ছাড়া মিলেছে বেশ কিছু ডিজিটাল আলামত। পরীক্ষার্থীদের নিজস্ব ইউজার আইডি ও গোপনীয় পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করতেন চক্রের সদস্যরা। ফলে পরীক্ষার ফল বের হলে তারা সহজেই জেনে যেতেন কে কে পাস করেছে।
এতে তাদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী বাকি টাকা আদায় সহজ হতো। এই চক্রের কাছে দুটি বিসিএস পরীক্ষার শত শত প্রবেশপত্রের ফটোকপি পাওয়া গেছে।