১ জুন ২০২৫:
আজ রোববার; ২০২৪ সালের ভয়াবহ ‘জুলাই গণহত্যা’ মামলায় এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি অভিযুক্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত এই ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এর মাধ্যমে শুরু হলো, যা বাংলাদেশে বিবেচিত হচ্ছে এক ঐতিহাসিক পর্ব হিসেবে ।
আজ দুপুর বেলা এর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।
এই অভিযোগে শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন: তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সহ আরও অনেকে।
তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ,প্ররোচনা, হত্যায় উসকানি, এবং সরাসরি নির্দেশনা প্রদান-সহ মোট পাঁচটি করে অভিযোগ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত ১২ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা অভিযোগ জমা দেয় ‘গণহত্যার প্রধান নির্দেশদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করে । এই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, শেখ হাসিনা সরাসরি দায়ী গত ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হওয়া এই হত্যাকাণ্ডগুলোতে ।
এছাড়া আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই হত্যাকাণ্ডে তারা সহায়তা করেছেন, তারা প্রশাসনিক অপব্যবহার করেছেন, এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে নিপীড়ন ও অত্যাচার চালিয়েছেন জনগণের উপর ।
প্রসিকিউশনের বক্তব্য ও তাদের প্রতিশ্রুতি জানিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম বলেন:
“গত জুলাই গণহত্যার সকল হত্যাকাণ্ডে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের । এই বিচারকে আমরা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পরিচালনা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি সেখানে আরও বলেন,
এই বিচার প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যেই আশা করা হচ্ছে এবং এই সময়ে বিচার ব্যবস্থার বাস্তব ও নির্ভরযোগ্য চিত্র জনগণ দেখতে পাবে।
তিনি ‘গুম ও আয়নাঘরের নিউক্লিয়াস’ বলেও আখ্যা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে । প্রসিকিউটর তাজুল জানান, এখনও কিছু বাধা রয়েছে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করাতে, তবে সেই বাধা আইনানুগভাবে দূর করার চেষ্টা চলছে।
সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সাজানো হয়েছে যাতে সরাসরি সম্প্রচার বা রেকর্ডকৃত ভিডিওর মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম প্রচার করা সম্ভব হয়। এর ফলে সম্ভব হবে বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং তা সংরক্ষিত থাকবে ভবিষ্যৎ ইতিহাসের দলিল হিসেবেও ।
আন্তর্জাতিক মহলে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এই বিচারকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে এই নিয়ে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তীক্ষ্ণ নজরদারি প্রয়োজন এর রাজনৈতিক প্রভাব এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার বিষয়ে।
Tasin/DBN