প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক প্রতিটি নির্বাচনেই প্রচারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল পোস্টার । পোস্টারের মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের প্রতীক, প্রতিশ্রুতি ও পরিচয় জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেন ।
তবে এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও শহরের সৌন্দর্য রক্ষার লক্ষ্যে সরে আসতে চায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি নির্বাচনী আচরণবিধিতে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের একটি সংস্কার আনতে চায়।
সেখানে নতুন প্রস্তাবিত আচরণবিধির খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে পোস্টার ব্যবহার করা নিষিদ্ধ থাকবে। এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মাধ্যমে পোস্টার উৎপাদন, ছড়িয়ে পড়া প্লাস্টিক, আঠা এবং পচনশীল উপকরণজনিত পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে কমিশন।
তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত বিদ্যমান রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই বিষয়ে বলেছেন:
“পোস্টার বন্ধ করা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা পরিবেশের দিক থেকেও অনেকটা ভালো। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন বিকল্প ব্যবস্থাগুলো যেন সবার নাগালের মধ্যে থাকে।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ সেখানে মন্তব্য করেন:
“নির্বাচন হচ্ছে একটি উৎসব। পোস্টার হচ্ছে সেই উৎসবের অলঙ্কার। যদি এর বিকল্প কিছু আসে, তাহলে সেটি যেন সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে হয়।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এই বিষয়ে জানান:
“বিলবোর্ডের প্রচার অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এতে বড়, ধনী ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব আরও বেড়ে যাবে। পিছিয়ে পড়বে নতুন ও ছোট দলগুলো ।”
নতুন খসড়ায় শুধু পোস্টার নয়, যুক্ত করা হয়েছে আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রস্তাবিত নিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে:
প্রার্থীদের দলীয় অঙ্গীকারনামা প্রদান বাধ্যতামূলক করা
নির্বাচনী প্রচারে টি-শার্ট ও জ্যাকেট ব্যবহার বৈধ করা
প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত বিধানকে বিস্তৃত করা
জরিমানার সর্বোচ্চ অঙ্ক তিন গুণ বাড়িয়ে ১.৫ লক্ষ টাকা করা
মাইকের শব্দসীমা সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল
সার্কিট হাউজ ব্যবহারে বিধিনিষেধ
আর্মস-এর নতুন সংজ্ঞা সংযুক্তি
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নতুন সংজ্ঞা
বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ, তবে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বৈধ
এই আচরণবিধি সংশোধনের পর তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (RPO) সংশোধন।
বিরোধীদের আশঙ্কা: কালো টাকা ও অসম প্রতিযোগিতা
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, পোস্টার নিষিদ্ধ করে বিলবোর্ড বা ডিজিটাল প্রচার চালু করলে প্রচার খরচ বেড়ে যাবে, যা শুধু ধনী বা ক্ষমতাবান দলের পক্ষেই সম্ভব।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন:
“পোস্টার বন্ধ করে যদি ব্যয়বহুল মাধ্যম খুলে দেওয়া হয়, তাহলে কালো টাকার দাপট আরও বাড়বে। এর বিকল্প হলো ব্যয়ের দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাঁধে নেয়া।”
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ বলেন:
“ সরকার যদি নির্বাচনী ব্যয় বহন করে, তাহলে দলগুলোর মাঝে সমান সুযোগ তৈরি হবে।”
আরিফুল ইসলাম আদীব ইসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন:
“অনেক সময় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন হলেও ইসি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা । তাহলে এই নিয়ম করে কী লাভ?”
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন:
“নতুন সময়ের উপযোগী আচরণবিধি দরকার, তবে সেটা যেন স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে হয়।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন:
“চূড়ান্ত করার আগে সবার মধ্যে আলোচনার সুযোগ থাকা উচিত, যাতে সবার পরামর্শ বিবেচনায় আনা যায়।”
Tasin/DBN