দক্ষিণ এশিয়ার বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ইউনেস্কো ও জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএলইউ) “এআই এবং আইনের শাসন” কর্মশালা
ইউনেস্কো এবং ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি দিল্লি (এনএলইউ দিল্লি) যৌথভাবে একটি তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে যার শিরোনাম ছিল “এআই এবং আইনের শাসন”। কর্মশালার লক্ষ্য ছিল বিচারক, আইন বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক এবং এআই বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পর্কিত জটিল বিষয়গুলো বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করা।
মানবাধিকারের সুরক্ষায় প্রশিক্ষণ
ইউনেস্কোর দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক টিম কার্টিস বলেছেন, “অ্যালগরিদমিক শাসনের এই নতুন যুগে মানবাধিকার রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি হল বিচারকদের মধ্যে জ্ঞানকে শক্তিশালী করা।”
ইউনেস্কোর গ্লোবাল টুলকিট
এই কর্মশালার অন্যতম প্রধান দিক ছিল ইউনেস্কোর “এআই সম্পর্কিত গ্লোবাল টুলকিট”। টুলকিটটি কীভাবে বিচার বিভাগে এআই ব্যবহার করা যেতে পারে, তা স্পষ্ট করে এবং বিচারকদের জন্য সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে। এটি পরামর্শ ও আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এবং কোর্টরুমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রধান আলোচ্য বিষয়
১. নৈতিকতা ও জবাবদিহিতা:এআই ব্যবহারে পক্ষপাত ও বৈষম্যের ঝুঁকি এবং মানবাধিকার রক্ষার নীতি নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্যানেলিস্টরা এআই পরিচালনার জন্য “ম্যান-ইন-দ্য-লুপ” পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরেন, যেখানে মানব-তত্ত্বাবধান বজায় রাখা হয়।
২. বিচারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই: কোর্টরুমে এআই-চালিত সরঞ্জাম ব্যবহার করার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিতর্ক হয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলগুলো প্রশমিত করার জন্য কৌশলগত পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩. গোপনীয়তা ও ডেটা সুরক্ষা: কর্মশালার আলোচনায় ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তার সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
যেহেতু AI প্রায়ই সংবেদনশীল তথ্য পরিচালনা করে, তাই কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
কর্মশালার ফলাফল ইউনেস্কো এবং এনএলইউ দিল্লির এই যৌথ উদ্যোগের লক্ষ্য হল এআই গভর্নেন্সের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করা। এতে আদালত ব্যবস্থায় নৈতিক, মানব-কেন্দ্রিক এআই-এর ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জন্য এটি একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি : পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং এই কর্মশালার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এআই যেন ভুল হাতে না পড়ে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এআই ব্যবহারের জন্য একটি নৈতিক কাঠামো তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে।
সার্বিক মূল্যায়ন : এই সম্মেলনটি আইন ও শাসনের ক্ষেত্রে এআই-এর ভবিষ্যত নিয়ে একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। আইনজীবী, বিচারক এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে এবং ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে, ইউনেস্কো এবং এনএলইউ দিল্লির এই প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।