প্রথম পরিচয় তিনি জনবান্ধব ও মানবিক। তিনি জনপ্রতিনিধি নন, তবে জনপ্রতিনিধির মতোই জনপ্রিয়। তিনি একাধারে উপজেলার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের প্রশাসক/চেয়ারম্যান ও পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব কিছুদিন পালন করেছেন। বিভিন্ন ইউপিতে চেয়ারম্যান না থাকার কারণে সেখানেও জনপ্রতিনিধির মতোই কর্মযজ্ঞতা চালাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম সীমা(১৮০৪৭) গত ২২শে অক্টোবর ময়মনসিংহের ফুলপুরে ইউএনও হিসেবে তাঁর একবছর পূর্ণ হলো। ২০২৪ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর ২২ অক্টোবর তিনি সিনিয়র সহকারী কমিশনার থেকে ফুলপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেসময়ের ভঙ্গুর ও টালমাটাল প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নিজ হাতে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরান। একজন নারী হয়েও দক্ষতা ও মেধাই অল্পদিনেই সফল হন। দল-মত নির্বিশেষে সকলের কাছে হয়ে উঠেন জনপ্রিয় ও মানবিক একজন ব্যক্তি হিসেবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কর্মদক্ষতা, মানবিকতা ও জনবান্ধব কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ ও একজন জনপ্রিয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি উন্নয়ন ও জনসেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন।
গেলো প্রায় ১৪ মাসে উপজেলা ও পৌরসভাজুড়ে কয়েক (আনুঃ ১৩/১৫) কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করেছেন। যা এখন দৃশ্যমান হয়ে জনগণের হৃদয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর আগের কর্মস্থল গুলোতেও রয়েছে নানান সুনাম।
গত ১৯ জানুয়ারি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের (ব্যাচ-৩৫) ১৬ তম উচ্চতর ভূমি ব্যবস্থাপনা কোর্সে প্রথম স্থান অধিকারী সম্মাননা অর্জন করেন তিনি। তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষ করে গত নভেম্বর মাসের ১ সপ্তাহে দেশে আসেন। উপজেলায় জমে থাকা বিগত কয়েক বছরের বকেয়া বিলও পরিশোধ করেছেন তিনি।

উপজেলা, পৌর প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, উপজেলার রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসায় সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও পাবলিক লাইব্রারি, উপজেলা বাউন্ডারি সহ দৃষ্টিনন্দন গেইট, মুক্ত মঞ্চ, মিনি পার্ক স্থাপন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন স্থানে স্পিড বেকার, হাসপাতালের সামনে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন, নতুন রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ড্রেন নির্মান, রাস্তা-ড্রেন সংষ্কার ও নিয়মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন, সচেতনতামূলক মতবিনিময়, স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা করা, খাল পরিষ্কার ও খননপূর্বক স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূরিকরণ, বাজার ও সরকারি স্থানে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ নানান উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ করেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। বিগত কিছু দিনেই ইউএনও সাদিয়া ইসলাম সীমার প্রচেষ্টায় ফুলপুর যেন ফুলের বাগানে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন আলোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রদান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ, চেয়ার, সুরক্ষা সামগ্রি, সিলিং ফ্যান, প্রিন্টার, ক্রীড়া সামগ্রি ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসসহ রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
বিভিন্ন ইউনিয়নে ভিডবিউবি প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রতিবন্ধি শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে হুইল চেয়ার, সেলাই মেশিন প্রদান, বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষ রোপণ ও বিতরণ, ক্লাইমেট ও কৃষি মেলার মাধ্যমে কৃষিতে উদ্বুদ্ধকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে শুকনা খাবার, টিউবওয়েল, টিন, নগদ অর্থ ও চেক বিতরণ, মশক নিধণে নানান উদ্যোগ গ্রহণ, উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য অবমুক্তকরণ, ভূমি বিষয়ক নানান জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, যুগ্ম সচিব এবং জেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে নানান কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও কয়েক শতাধিক ব্যক্তিকে নানান প্রশিক্ষণ ও কয়েক কোটি টাকার স্বল্পসুদে ঋণ ও অনুদান বিতরণ, বিভিন্ন জায়গায় খাস জমি উদ্ধার, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে জনসচেতনতা তৈরিতে উঠান বৈঠক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকসেবিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, জরিমানা ও কারাদন্ড প্রদান, বিভিন্ন ইটভাটা, দোকানপাট, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, জাল, নির্ধারিত সময়ে পণ্য বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা-সরঞ্জমাদী নিয়ন্ত্রণ ও উচ্ছেদে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জনগণকে সচেতনতামূলক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রায় ১২০টি মামলা করেছেন। তার মধ্যে মাদক সেবনকারী এবং বিক্রয়কারী প্রায় ১৪ জনকে কারাদন্ড প্রদান করেছেন। উপজেলা অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় দাবি দ্রুত সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি আস্থা। শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি অসহায়, গরিব ও দু:স্থ মানুষের জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেন। তিনি জনবান্ধব, সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এছাড়াও ফুলপুরবাসীর জন্য যানজট নিরসন ও জনদুর্ভোগ কমাতে একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। অলরেডি সিএনজি স্টেশন তৈরি করেছেন। এছাড়াও নানান উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা করে রেখেছেন তিনি। এক কথায় বলা যায় অবহেলিত ফুলপুর এখন উন্নয়নের সিঁড়িতে দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নরসিংদী জেলার মৃত সিরাজুল ইসলাম সাহেবের ৬ষ্ঠ সন্তান সাদিয়া ইসলাম সীমা। তিনি বর্তমানে দুই সন্তানের জননী। উনার স্বামী একজন বেসরকারি চাকরিজীবী।
৭ বছর বয়সের ছেলে এবং দেড় বছর বয়সী কন্যাকে নিয়ে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনেই বসবাস করেন তিনি। মিশে থাকেন ফুলপুরের সাধারণ মানুষের সাথে। ভোর থেকে প্রায় রাত অব্দি চলে তার প্রশাসনিক কর্মযজ্ঞতা। তারই মাঝে বাহিরে মোবাইল কোর্ট আর সাধারণ মানুষের অভিযোগ সরেজমিনে পরিদর্শন তো আছেই। সকলের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকেন সবসময়। অফিসিয়াল সময়ে সরকারি কাজের বাইরেও ছুটে চলেন পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নানান দায়িত্ব পালনে। অফিস সময়ের শেষেও নিয়মিত নিজ দপ্তরে বসে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নানান কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকেন। এরই মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, নানান শ্রেণি-পেশা আর সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটান সাধ্যমতো। তার সরকারি অফিসে যাতায়াতে নেই কোন বাঁধা। সাধারণ মানুষের আনাগোণায় প্রায়ই তার দপ্তর পরিণত হয় একজন জনপ্রতিনিধির অফিস হিসেবে। তারই মাঝে কিছু লোকের অনৈতিক অনিয়মে রাজি না থাকায় বিভিন্ন প্রটোকল থেকে নানার চাপের মুখেও পড়তে হয়। তবে তিনি কঠোর, অনিয়মের আবদার ডাস্টবিনে রেখে কাজের স্বচ্ছতা আর সততায় অটল রয়েছেন। সবদিক দিয়ে নিখুঁতভাবে কার্যসম্পাদনে সিদ্ধ হস্তের অধিকারী হওয়ায় উপজেলার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা যে কতটা জনপ্রিয় ও মানবিক হতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইউএনও সাদিয়া ইসলাম সীমা, যে তাকে চেনেন প্রায় সকলেই স্বীকার করেন। সাধারণ জনগণ তাকে জনবান্ধবকন্যা হিসেবে ও স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ইউএনও সাদিয়া ইসলাম সীমা সংবাদকর্মী তপু রায়হান রাব্বী কে বলেন, আমার বাবার মতই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। ইউনিয়ন সহ পৌরসভার বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। সৌন্দর্যবর্ধনের অচিরেই আরো উন্নয়ন কাজ দৃশ্যমান হবে। ভালো কাজ করতে গেলে কিছু আবদার ও বাধাঁ আসবেই। তাই বলে তো ইতি টেনে রেখে দেওয়া যাবে না। সকল বাঁধাকে অতিক্রম করে স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে কাজ করার আনন্দই অন্যরকম। অলরেডি আরো উন্নয়নমূলক কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েও চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে এ উপজেলার সচেতন নাগরিকরা পাশে ছিল বলে আজ ফুলপুরটাকে একটু সাজাতে পারছি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য স্থানীয় সমাধান সহ ফুলপুরবাসীর জন্য আরও কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব খুব শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে। তবে আগামি পথচলায় সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

