বিশ্বব্যাপী এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রমে দীর্ঘদিনের অগ্রগতি একটি সংকটপূর্ণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়ায় চিকিৎসা, পরীক্ষা ও কমিউনিটি-নির্ভর সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডব্লিউএইচও’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। এবং ৪ কোটি ৮ লক্ষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছেন।
২০২৫ সালের রেকর্ড অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ২০২৫ সালে (নভেম্বর পর্যন্ত) বাংলাদেশে নতুন করে এইডস (HIV) এ আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯১ জন।
বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানায়, নতুন সংক্রমণের বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, আমরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কমে গেছে, প্রতিরোধ কার্যক্রম স্থবির।
ডব্লিউএইচও সতর্ক করেছে, হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন হ্রাস পাওয়ায় অনেক দেশের প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম গুরুতর এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু দেশে আংশিকভাবে অথবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এসব সেবা।
ডব্লিউএইচও’র তথ্যমতে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সালে এইচআইভিতে আক্রান্ত ছিল ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এবং ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ ওই বছর এইচআইভি–সম্পর্কিত কারণে মারা গেছেন।
এইডস ভ্যাকসিন অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন এই বিষয়ে জানায়, চলতি বছর ২০২৪ সালে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক দাতাদের অর্থ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস ব্যবহার করা ২৫ লাখ মানুষ এই সেবাটি হারাবে।
সংস্থাটি জানায়, বিশ্বব্যাপী এখনও সামাজিক কলঙ্ক, বৈষম্য ও আইনগত বাধার কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ২০২৫ সালে এইচআইভি প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ডব্লিউএইচও লেনাকাপাভির নামের নতুন এক প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস ওষুধ অনুমোদন করেছে। এটি একটি ‘রূপান্তরমূলক উদ্ভাবন’ , যা বছরে মাত্র দুইবার ইনজেকশন হিসেবে নিতে হয়।
ডব্লিউএইচও ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবর ওষুধটি প্রি-কোয়ালিফাই করে, যার ফলে দ্রুত দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ায় এটি অনুমোদন পাওয়ার পথ খুলে যায়। দৈনিক ওষুধ খেতে অসুবিধা হয় বা স্বাস্থ্যসেবায় যেতে গিয়ে সামাজিক কলঙ্কের মুখে পড়েন এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর হবে।
ডব্লিউএইচও’র এইচআইভি, টিবি, হেপাটাইটিস ও যৌন সংক্রমণবিষয়ক বিভাগের পরিচালক ড. তেরেজা কাসায়েভা বলেন, আমরা এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি। কিন্তু জরুরি বিনিয়োগ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ এই অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত হবে।
ডব্লিউএইচও সকল সরকারকে এইচআইভি সেবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় একীভূত করতে, স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

